*সায়নী*
ভুতুড়ে বাস্ক
পর্ব -১
সেনগুপ্ত বাড়িতে আজ আনন্দের দিন। সেনগুপ্ত বাড়ির এক মাত্র ছেলে রামের বৌ নন্দিনী তার ছেলে নিয়ে বাড়িতে এসেছে । কিছু দিন আগে সে যমজ ছেলের মা হয়েছে। সেনগুপ্ত বাড়িতে তাকে আর তার ছেলেদের নিয়ে যেন আনন্দের সীমা নেই। সবাই তাদের ঘিরে হইহই করছে । হঠাৎ ই আনন্দের তাল কাটলো । দরজায় এসে দাড়িয়েছে রামের প্রথম স্ত্রী সায়নী । সে শুধু রামের প্রথম স্ত্রী নয়, সে নন্দিনীর এককালের প্রাণের বান্ধবী।
নন্দিনী আর সায়নী ছোটবেলা থেকেই বন্ধু । একি স্কুল , কলেজে একি সঙ্গে পড়েছে । কলেজে পড়তে পড়তেই সুন্দরী সায়নীর দেখাশোনা করে বিয়ে হয় রক্ষণশীল বনেদি সেনগুপ্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে রামের সঙ্গে । তারপর তার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও রক্ষণশীল শশুর বাড়ির চেপে সে পড়াশুনা করতে পারেনি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে । সায়নী সে রকম বাড়ি থেকে বাড়িতে পারতো না বলে নন্দিনী তার শশুরবাড়িতে দেখা করতে আসতো । আর তখন মাঝেমধ্যে রামের সাথে দেখা হতো। রামের অসম্ভব সুন্দর চেহারা আর সেনগুপ্ত বাড়ির ঠাট বাট দেখে মধ্য বিত্ত পরিবারের মেয়ে নন্দিনী কখন যে রামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে সেটা সায়নী বুঝতে পারিনি ।
সায়নীর বিবাহ জীবন খুব যে সুখের ছিল তা নয় । রামকে সায়নী ভালো বুঝতে পারতো না । রাম কমন একটা নস্পৃহ স্বভাবের ছেলে । নিজের পয়জনের বাইরে আর কিছুই যেন সে ভাবতে পারতো না । সায়নীর সঙ্গে রামের ব্যাবহার ছিলো অত্যন্ত ঠান্ডা । সায়নী যে একটা পরিপূর্ণ মানুষ সেটা যেনো রামের খেয়াল থাকতো না । ফলে সায়নীর কোনো অনুভূতি , কোনো চাহিদার কোথাই রাম কে সে বলতে পারতো না আর রাম ও শুনতে চায়নি কখনো । রাতের বিছানা তেও রাম নিজের প্রয়োজন টুকু বুঝে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত , সায়নী দিকে ফিরে ও তাকাতো নোর প্রইয়জন বোধ করতো না । রাতের পর রা একাকীত্বে রাতের পর রাত একাকীত্বে যন্তনা নিয়ে জেগে করতো সায়নী ।
স্বামীর উদাসীনতার সঙ্গে সায়নীর যন্তনা বাড়িয়ে ছিলো তার শাশুড়ির ব্যাবহার । বনেদি বাড়ির মেয়ে ও বৌ হলেও সায়নীর শাশুড়ি সুন্দরী ছিলেন না ফলে সুন্দরী বউ কে একটু হিংসার চোখে দেখতেন আর সেটা আড়াল করতে গিয়ে সায়নী র প্রতি তার ব্যাবহার ছিল অত্যন্ত কর্কশ। উটতে বসতে সায়নী ও তার বাপের বাড়িকে ছোট করতেন তিনি । সায়নী তার কোন বাজে ব্যাবহারের কোন প্রতিবাদ করতো না বলে নিজের চোখে নিজে ছোট হয়ে যেতেন আর সায়নীর ওপর তার রাগ বারতো। সায়নী সব মানিয়ে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে যখন একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিল তখন তার শাশুড়ি তাকে বাড়ি থেকে বার করে দিলেন । রাম ও কোন প্রতিবাদ করলো না। মেয়ে নিয়ে সজল চোখে সেনগুপ্ত বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হল সায়নী কে । আর তখনই রামের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে সেনগুপ্ত বাড়িতে প্রবেশ করলো নন্দিনী ।
সায়নী র আড়ালে সায়নী থাকতে থাকতেই রামের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিল নন্দিনী । রামের মা নন্দিনী কে পছন্দ করে ছিলেন কারণ নন্দিনী সুন্দরী ছিল না । সুন্দরী সায়নী কে সরাতে তিনি নন্দিনিকে ব্যাবহার করে ছিলেন আর নন্দিনী সব বুঝেও বড় ঘরের বউ হবার লোভে বন্ধুর পিঠে ছুরি বসাতে দ্বিধা করেনি । সায়নী নন্দিনী কে কখনও কিছু বলেনি এই ব্যাপারে কিন্তু বখুলোজ্জাতে নন্দিনী সায়নী র সাথে বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দেয়। রাম ও নন্দিনীর বিয়ের পর থেকে সায়নীর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না নন্দিনীর। তাই এতদিন বাদে সায়নী কে দেখতে কেমন একটা অস্বস্তিতে নন্দিনীর মনটা ভরে গেলো ।
সবার চোখ সায়নীর দিকে আটকে আছে। তাকে কেউ একানে এইভাবে আসা করেনি । নন্দিনী অস্বস্তি কাটিয়ে কোন কথা বলতে পারলো না। হাঁ করে সায়নীর দিকে তাকিয়ে রইলো। সায়নী ও এক দিষ্ট্রি তে তাকিয়ে আছে নন্দিনীর দিকে। উপস্থিত সবাই একবারে চুপ করে গেছে । আচমকা রামের মা সায়নী র দিকে এগিয়ে যেতেই সায়নী জ্বলন্ত সিগারেট চোখে তার দিখে তাকিয়ে বললো "আমি এখানে কিছু নিতে আসিনি, দিতে এসেছি। নন্দিনী আমার পুরোনো বান্ধবী। ওর সন্তান হয়েছে তাই ওকে সামান্য উপহার দিয়েই চলে যাবো।" সায়নী আস্তে আস্তে নন্দিনীর সামনে এসে দঁড়ালো। নন্দিনী নিস্পন্দের মত বলে আছে।
"তোকে এই ছোট্ট বস্কটা দিতে এসেছে। তোর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা এর মধ্যে রাখিস আর আমাকে ভুলিস না যেনো। অবশ্য আমি জানি তুই আমাকে ভুলতে পারবি না। এত ভালো বন্ধু অমর"। কথাগুলো শেষ করে হতবাক নন্দিনীর কোলে একটা ছোট্ট বন্দনকাঠের বাস্কো বসিয়ে দিয়ে উপস্তত সবার হতভম্ব চোখের দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় সায়নী। তার মুখে এক অতভুত ব্যাঙের হাসি যেনো খেলা করছিলো তখন। সায়নী চলে যাবার পর নন্দিনী বাসকো টা খুলে দেখে একদম ফাঁকা। সবাই যখন সায়নী কে নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছে, তখন আচমকাই নন্দিনী র ছেলেরা জোরে কেঁদে উটলো ।
অতভূত ভাবে সেই রাতেই এক অজানা জ্বরে কোয়েক ঘন্টার মধ্যে নন্দিনীর দুই ছেলে মারা গেলো। ডাক্তাররা চিকিৎসা করার সময় ও পেলো না। এক রাতেই দুই ছেলেকে হারিয়ে নন্দিনীর তখন পাগলের মতো হয়ে উটল। সারাদিন শুধুই কেদে চলে সে। আচমকাই এক রাতে সে যখন একা জেগে বসে কাদছিল তখন সায়নী দেওয়া বস্কটা যেনো নড়ে উঠলো। সে তারা তারি বাস্কটা র কাছে যেতেই শুনতে পেল তার মৃত দুই শিশুর ক্ষীণ কান্না। তীব্র চিৎকার করে উঠলো নন্দিনী।
বারিসুদ্দু সবাই ছুটে এলো তার ঘরে কিন্তু কেউই সে কান্না শুনতে পেলো না। তারপর থেকে দিনরাতে নিজের মৃত সন্তানের কান্না বাস্ক থেকে শুনতে লাগলো নন্দিনী। বাধ্য হয়ে তাকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার তাকে আবার মা হওয়ার পরামর্শ দিল। সবাই সেটাকে ঠিক মনে করলো কারণ সবার মনে হলো আচমকা যমজ সন্তানের মরে যাওয়ার কারণে নন্দিনীর মনে যে প্রভাব পড়াছে সেই কারণে নানা রকম কল্পনা করছে। কিছু দিনের মধ্যে আবার সন্তানের মা হল নন্দিনী। সেনগুপ্ত পরিবারে আবার আনন্দের ঝর উটল। কিন্তু নন্দিনী সেই বাস্ক থেকে একোনো বাচ্চার কান্নার শব্দসুন্তে পারছে। সবাই তাকে বাস্ক টা ফেলে দাওয়ার কথা বললেও সে সেটা প্রাণ ধরে ফেলতে পারল না । বাস্ক টার উপরে এক অন্য রকম আকর্শন বোধ করত সে। তার মনে হতো তার সন্তান রা তাকে ছেড়ে যায়নি, তার কাছেই আছে।
যথাযথ সময় আবার যমজ সন্তানের জন্ম দিল নন্দিনী। কিন্তু আবার সেই একই ঘটনার পুনরবৃত্তি। জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই পেটের সমস্যায় মারা গেলো দুই সন্তান সেই বাস্ক মধ্যে শুনতে পেলো চার শিশুর কান্নার শব্ধ। অথচ সেই কান্নার শব্ধ সে ছাড়া র কেউ শুনতে পাই না। রাতের পর রাত জেগে কাটাতো নন্দিনী। শিশুদের কান্না তাকে অস্থির করে তোলে অথচ সে বাস্ক টা কোনো রকম ভাবে ফেলতে পারে না। এক সময় অস্তির হয়ে সায়নীর কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো। নন্দিনী বুজলো একমাত্র সায়নী পারে তার পস্নোর উত্তর দিতে।
অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে র পর নন্দিনী সায়নীর বাপের বাড়ি গেলো। সেখানে গিয়ে যা সে জানতে পারলো তা শুনে সে কেপে উঠল। সায়নী মারা গেছে নন্দিনী - রামের বিয়ের রাতে। সে রাতে সায়নী তার মেয়ে কে নিয়ে বাড়িয়ে গাছেলো। দিন তিন এক পর সায়নীর মা বাবা জানতে পারে পুলিশ এর থেকে থেঁতলানো শরীরের সনাক্ত করার জন্য।
পুলিশ জানিয়েছে যে লরিতে চাপা পড়ে সায়নী। অনেক চেষ্টা করেও তার মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। নন্দিনী চমকে উঠে ভাবে সায়নী যদি মারা গিয়ে থাকে কাঠের বাস্ক টা যে দিয়ে ছিলো সেটা কে? পশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরো জটিল পশ্নের আবর্তে জড়িয়ে পড়ল নন্দিনী। সায়নীর মৃত খবর, নিজের মৃত সন্তান দের করুন কান্না, অজস্র পস্নো পাগল করে তোলে তাকে।
To be continue.......................
Read more: https://technicalworld2345.blogspot.com/2022/09/iqoo-9-se-5g-space-fusion-8gb-ram-128gb.html
If you have any doubt so contact me